নীলচে সুখ
-সুজিত চট্টোপাধ্যায়
পর্ব-১
এখন মধ্যরাত। গ্যাংটকের `নীলচে সুখ’ রিসর্টের বাগান ঘেরা সবুজ ঘাসে ঢাকা লনের চেয়ারে বসে শরতের মেঘমুক্ত নীলাকাশ দেখছিল নীল।
তারাগুলো যেন একটু বড়ো লাগছে, এখান থেকে। হালকা হালকা ঠান্ডা।
দূরের পাহাড়গুলোর গাঢ় অন্ধকার কালো গায়ে দীপাবলির মতো ঝিকমিক করছে মন উদাস করা সুন্দরী আলোক সজ্জা।
অনেকটাই হুইস্কি খেয়েছে নীল। অনেকদিন পরে মদ খেলো নীল। কেন কে জানে হঠাৎই ইচ্ছে করলো।
সঙ্গে স্ত্রী রুমা, ছ’বছরের পাপুকে নিয়ে এখন ঘরে ঘুমে অচেতন। গাংটকে আসার পরিকল্পনা বা ইচ্ছে রুমারই। নীল বাধা দেয়নি। তবে এখানে আসতে নীলের মন চায় না। ভয় করে। স্মৃতি উসকে ওঠে। মানালি।
মানালিকে ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়। নীলের মনে, মগজে, শরীরের প্রতিটি রোমকূপে সে আছে একাকার হয়ে। ওই দূরে মায়াবী অকাল দীপাবলির মতো। ধরা ছোঁয়ার বাইরে, আশ্চর্য আকর্ষণে মোহিত করে। মানালি।
এখানেই প্রথম দেখা। গ্যাংটক।
নীল তখন বি.এস.সি. ফাইনাল ইয়ার। সদ্য পরীক্ষা শেষ হয়েছে। ওরা চার বন্ধু প্ল্যান করলো কাছাকাছি কোথাও কয়েকদিনের জন্যে ঘুরে এলে মন্দ হয় না। অনেক ঘেঁটেঘুঁটে পরীক্ষানিরীক্ষা তর্কাতর্কি শেষে সাব্যস্ত হলো গ্যাংটক। পাহাড় নদী ঝর্ণা, মানে এককথায়, কম বাজেটে স্বর্গের শোভা দর্শন। ট্রেনে নিউ জলপাইগুড়ি। সেখান থেকে বাসে গ্যাংটক। এই রকমই ঠিক ছিল, কিন্তু জলপাইগুড়ি এসেই আচমকা প্ল্যানটা বদলে গেল।
বাসস্ট্যান্ডে, একজন প্রায় মধ্য বয়সী ভদ্রলোক সামনে এসে বললেন-‘ভাই, আপনারা কী গ্যাংটক যাবেন?’
পোশাক পরিচ্ছদ বা উচ্চারণ শুনে বোঝাই যাচ্ছিল, ইনি গাড়ির বা কোনও হোটেলের দালাল নন। দালালদের স্বার্থপর হিসেবি চোখ আর চোয়াল, দেখলেই বোঝা যায়। দালাল। দালালি, এক অদ্ভুত জীবন জীবিকার পোশাকি নাম।
দীপেন সবসময়ই খুব সাবধানী। সে ভদ্রলোকের দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
‘কেন বলুন তো?’
ভদ্রলোক বিনয়ের ভঙ্গিতে বললেন,
‘মানে, আমরা ঐখানেই যাচ্ছি কিনা..’
দীপেন তাকে থামিয়ে দিয়ে বললো, ‘আপনারা যাচ্ছেন যান, আমাদের যাওয়া..’
ভদ্রলোক হাত তুলে দীপেনকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, ‘আহা, কী মুশকিল, আমার কথাটা আগে একটু দয়া করে শুনুন।’
ব্রজেশ চোখের ইশারায় দীপেনকে চুপ করিয়ে দিয়ে বললো,’ না না, ঠিক আছে, বলুন কী বলবেন?’
ভদ্রলোক তার কথা শুরু করার মাঝেই তার পিছনে আরও দুজন এসে দাঁড়াল। একজন ভদ্রমহিলা, প্রায় ঐ ভদ্রলোকের মতই হবেন বয়সে। আর একটি কিশোরী বলা যায়! নাকি যুবতী? যে কিনা এদেরই বয়সী।
তিনজনকে একত্রে এক্কেবারে অন্যরকম লাগছে। বেশ একটা সুখী পরিবার যেমন হয়ে থাকে আর কি, তেমনই।
এবার ভদ্রমহিলা বললেন, ‘আমি বলছি।
ব্যাপারটা হলো, আপনারা যদি গ্যাংটক যান তাহলে আমরা শেয়ারিং করে একটা গাড়ি ভাড়া করতে পারি। আপনারা চারজন, আমরা তিনজন। টাকাও কম লাগবে আর যাওয়াও নির্বিঘ্নে হবে। নইলে বাসের জার্নি, জানেনই তো। তাছাড়া সময়ও একটা ফ্যাক্টর। বাসে অনেক সময় নেবে। এবার আপনারা ভেবে দেখুন। অবিশ্যি, আপনাদের আপত্তি থাকলে আমাদের কিছু করার নেই। সত্যি কথা বলতে কী, আপনারা ইয়াং ম্যান।বাঙালি। সঙ্গে থাকলে, যতই হোক বিদেশ বিভুঁইয়ে, একটু বাড়তি সাহস যোগায়।
দেখুন ভেবে। তবে, আমাদের কিন্তু গাড়ি নিতেই হবে, কেননা আমার এই মেয়ে, বেশিক্ষণ বাসে চাপতে পারে না। বমি করে।’
কিশোরী লজ্জা পেলো শুধু নয়, একটু অপ্রসন্ন অপ্রস্তুত হয়ে মায়ের কনুইতে সকলের নজর এড়িয়ে একটা মৃদু চিমটি কেটে দিলো। মুখে বললো, ‘মা, যা করবার তাড়াতাড়ি করো। এই রোদ্দুরে আর ভালো লাগছে না।’
কেউ লক্ষ্যই করেনি, নীল এতক্ষণ ওই মেয়েটির দিকেই তাকিয়ে ছিল।
হালকা চাপা গায়ের রঙের সাথে মানানসই চাঁপাফুল রঙের শালওয়ার আর সাদা কামিজ। হালকা ঢেউ খেলানো এলোমেলো অবিন্যস্ত চুল। সারারাতের ট্রেন জার্নির ধকলে কৃত্রিম সাজ মুছে যাওয়া মুখ, যেন ওকে আরও সুন্দরী করে তুলেছে।
কম বয়স, সবসময়ই সুন্দরতার আধার। স্ত্রীলোকের ক্ষেত্রে তা আরও বিশেষ করে দাবী রাখে নিশ্চয়ই। এ প্রকৃতির খেলা।
নীলের মনের মধ্যে কে যেন বলে উঠলো, না না, ওর কোনও কষ্ট হতে দেওয়া যাবে না। সেটা হবে চরম অমানবিকতা।
এমন মনে হবার কারণ জিজ্ঞেস করা নিতান্তই নিরর্থক। কেন না, ভালোলাগা কখন কীভাবে কোথা দিয়ে লখিন্দরের লৌহ কক্ষের ফাঁক খুঁজে ঢুকে পড়ে তা বোধকরি ঈশ্বরেরও অজানা।
‘ঠিক আছে, চলুন। একসঙ্গেই যাওয়া যাক।’ বলেই সকলের মুখের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘চল, যাওয়া নিয়ে কথা। অসুবিধের কী আছে। এ বরং ভালোই হলো, কী বলিস?’
বাকিদের মুখে কোনও কথা নেই। কেবল চোখে কিঞ্চিৎ অবাক চিহ্ন প্রকাশ পেলো।
পর্ব-২
পাহাড়ি পথে গাড়ি ছুটে চলেছে। পাকাপোক্ত ড্রাইভার। এই রাস্তার প্রতিটি ইঞ্চি তার নখদর্পণে। তবুও নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই নিরাপদে গাড়ি চালানোর নিয়ম এই পাহাড়ি পাকদণ্ডী পথে। ডানদিকে খাড়াই পাহাড়। বামদিকে বিপদজনক খাদ। সামান্য একটু ভুলে, অনেক বড়ো মাশুল দিতে হতে পারে।
চারপাশের নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে এগিয়ে চলা। এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতেই তো এখানে আসা।
ইটের পাঁজরে লোহার খাঁচার সাময়িক বন্ধন মুক্তি। ছুটি। কবির সেই লাইনটা মনে পড়ছে।
কাজের একপিঠে যেমন কেবলই ছোটা আর এক পিঠে তেমন কেবলই ছুটি।
পাহাড়ি ঝিঁঝিঁ পোকার একটানা কান্না আর গাড়ির ইঞ্জিনের শব্দ ছাড়া, আর কোনও শব্দ নেই। এমন পরিবেশে চুপ করে প্রকৃতির নির্বাক মৌনতায় মজে থাকতেই মন চায়।
কথা নয়, কথা নয়। এসো নিঃশব্দতায় যাপন করি, যেটুকু আছে সময়।
এটা নীলের লেখা কবিতার লাইন। নীল বেশ ভালো কবিতা লেখে। ফেসবুক বন্ধুরা তো ওর নামের সঙ্গে ‘কবি’ পদবী জুড়ে দিয়েছে। নীলের হাসি পায়। তবে বাধা দেয়না। বুঝে নিয়েছে, ওটা অভ্যাস বশতঃ উচ্চারিত কথা। গুরুত্ব দেওয়া বৃথা।
ভদ্রমহিলা বললেন, ‘আপনারা কী হোটেল বুকিং করে এসেছেন?’
তন্ময় বললো, ‘না না। খুঁজেখাঁজে একটা সস্তার হোটেল দেখে নেবো। আমাদের যাহোক একটা মাথা গোঁজার জায়গা হলেই চলে যাবে।’
ভদ্রমহিলা মৃদু হেসে বললেন, ‘তা ঠিক। তোমরা ছেলেছোকড়ার দল। তোমাদের আর অসুবিধে কীসের।’ তারপরেই হঠাৎ কুন্ঠিত গলায় বললেন, ‘তোমাদের তুমি বলে ফেললাম, কিছু মনে করলে?’
অসীম বললো, ‘না না কাকীমা। একদমই না। আমরা তো আপনার ছেলেরই মতো।’
-‘আমার ছেলে নেই, এই একটিই মেয়ে। এই বেড়াতে আসার দু’টো কারণ। এক তো আমার মেয়ের বায়না। পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে। বেড়াতে যাবো। তাই বেড়িয়ে পরা।
দ্বিতীয় কারণটা তুমিই বলো না..’কর্তার উদ্দেশ্যে বললেন কথা গুলো।
-‘হ্যাঁ, ঠিকই। সেটাও একটা কারণ নিশ্চয়। ব্যাপার হচ্ছে আমার এক বন্ধু এই বছরখানেক আগে আপার গ্যাংটকে একটা রিসর্ট লিজ নিয়েছে। প্রায়ই আসতে বলে। নানান কারণে হয়ে ওঠেনি। এই ফাঁকে সেটাও সেরে নেওয়া হবে। ওই জায়গাটা নাকি বেশ নিরিবিলি। মানে, ঘিঞ্জি নয়।
বেড়াতে এসে ঘিঞ্জি চ্যাঁচামেচি ভীড়, একদম ভালো লাগে না। তোমরা কী বলো? বেড়ানো মানে তো শুধু মনের আরাম নয়। চোখ কান নাকের আরামও তো চাই নাকি? বলেই হা হা করে হেসে উঠলেন।’ ভদ্রমহিলা কপট রাগ দেখিয়ে বললেন, ‘ওফফ, এখানেও তোমার মাষ্টারি শুরু করলে?’
বোঝা গেল ভদ্রলোক শিক্ষকতা করেন।
তিনি হাসি থামিয়ে হালকা গলায় বললেন,
‘ওহ্, আই এম স্যরি। ‘
ভদ্রমহিলা বললেন, ‘তোমরাও ইচ্ছে করলে সেখানেই উঠতে পারো।’
ওরা মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগলো। ভদ্রমহিলা ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বললেন, ‘চিন্তার কিছু নেই। তোমাদের বাজেটের মধ্যেই হবে। সেটুকু অবশ্যই বলতে পারি। তবুও তোমরা ভেবে দ্যাখো।’
গাড়ি একটা খাবারের হোটেলের সামনে দাঁড়িয়ে গেল। ড্রাইভারের পরিচিত হোটেল। এখানেই দুপুরের খাওয়া সেরে নিতে হবে।
গ্যাংটক পৌঁছাতে বিকেল গড়িয়ে যাবে।
খেতে খেতে খুব বেশি কথাবার্তা হলো না ওদের মধ্যে। শুধুমাত্র এইটুকু জানা গেল। মেয়েটির নাম মানালি। বি.এস.সি. ফাইনাল ইয়ার। পরীক্ষা শেষ। এখন এরা আপাতত একই পথের যাত্রী।
পর্ব-৩
তখন বেলা গড়িয়েছে। মেঘলা আকাশ। এখানে যখন তখন বৃষ্টি নামে। অচেনা ভিনদেশী হাওয়ায় পাহাড়ের সোঁদাগন্ধ। দিন রাতের বালাই নেই, ঝিঁঝি পোকার অন্তহীন ক্রদন অব্যাহত। মিউজিক্যাল অর্কেস্ট্রা। একটা যাদুকরী প্রশান্তি ছড়িয়ে মনকে মাতাল করে তুলছে। চড়াই উৎরাই, পাহাড়ের ইইউ টার্ন । ভয়াবহ অথচ অপরূপা সৌন্দর্যের রাণীকে মনপ্রাণ ভরে দেখতে দেখতে চলে এলো গ্যাংটক।
গাড়ি থামলো সেই রিসর্টের সামনে। সুন্দর নিখুঁত একটি ডাকবাংলো। দুধসাদা রঙের বাড়ি। চারপাশ নানান রঙের ফুল দিয়ে সাজানো বাগান। সবুজ লন। বিরাট ছাতার নিচে পালিশকরা কাঠের চেয়ার টেবিল সাজানো। কারুকাজ করা বিশাল রেলিং গেট। ড্রাইভার গাড়ির হর্ন বাজাতেই ছুটে এলো একজন। দরজা খুলে গেল। বাংলোর মাথায় বিরাট গ্লোসাইনবোর্ড। তাতে নীল রঙের মোটা অক্ষরে লেখা ‘নীলচে সুখ’।
ওদের একটা ফোর বেডের রুম। বেশ বড়ো এবং সাজানো। ওরা ব্যাগ খুলে সঙ্গে আনা জিনিসপত্রগুলো গুছিয়ে রাখতে রাখতে নিজেদের মধ্যে কথা বলছিল।
তন্ময় বললো,’নীলচে সুখ। হায় হায়। এ সুখ টিঁকলে হয়!
দীপেন বললো, যা বলেছিস। লম্বা একখানা বিল ধরিয়ে দিলেই চিত্তির। বাজেট, জেড প্লেন হয়ে উড়ে যাবে। নীলচে সুখ, হুঁ.. হ্যাঁ রে নীল, সুখের কী কোনও রঙ হয়। নীলচে, লালচে?
নীল বললো, ‘হয় বৈকি। সুখ কী একরকম? নানান সুখের নানান রঙ। কারোর পেয়ে সুখ, কারোর পাইয়ে দিয়ে সুখ।’
তন্ময় বললো, ‘ও, তাই বুঝি। তাহলে হারিয়ে সুখ? তার কী রঙ ভাই, কালচে?’
সবাই হৈ হৈ করে হেসে উঠলো। নীল হাসতে হাসতে বললো, ‘না রে ভাই, কালচের ওপর দুঃখের একচেটিয়া অধিকার। সেখানে সুখের প্রবেশ নিষেধ।
আজ বিশ্রাম। কাল সকালে লাচুন লাচেন যাওয়া। সিকিমের সবচেয়ে সুন্দর জায়গার মধ্যে এই দু’টি নাম সবার আগে। সকাল সাতটার মধ্যে রেডি হয়ে বেরুতে হবে। তাছাড়া শরীর বেশ ক্লান্ত। রাতের খাবার খেয়ে ওরা তাড়াতাড়ি শুয়ে পরার তোড়জোর করছে। এমন সময় দরজায় টোকা।
তন্ময় দরজা খুলে দিলো। বাইরে দাঁড়িয়ে প্রফেসর প্রকাশ রায়। ওরা ঠিক পাশের রুমেই আছেন।
-‘আসতে পারি? মানে, একটু কথা ছিল,’
তন্ময় বললো, ‘নিশ্চয়, আসুন স্যার।’
প্রফেসর রায় কোনও অকারণ ভনিতা না ক’রে বললেন, ‘তোমাদের কালকের প্রোগ্রাম কিছু ঠিক করেছো?’
তন্ময় বললো, ‘হ্যাঁ স্যার, আমরা কালকে লাচেন লাচুন যাবো ঠিক করেছি।’
স্যারের মুখ যেন খুশিতে ঝকমক করে উঠলো, বললেন, ‘ওয়ান্ডারফুল। কিন্তু তার জন্য তো গাড়ি দরকার। আগেই বুকিং করতে হয়। তক্ষুনি পাওয়া খুবই মুশকিল। দু’রাত তিনদিনের ব্যাপার। ওরা চুক্তিতে যায়। তোমরা তেমন কিছু ব্যবস্থা করেছো কী? শুধু তাই নয়, ওগুলো তো একেবারে পাহাড়ের কোলে ছোট্ট ছোট্ট গ্রাম। তাই থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। এরা, এই সমস্ত কিছুর দায়িত্ব নেয়। তাই বলছিলাম, সেইসব ব্যবস্থা করেছো কী?’
কথাগুলো শুনে ওদের এক্সপ্রেশন একেবারে হাঁদারাম মার্কা হয়ে গেল।
দীপেন হতাশ গলায় বললো, ‘সর্বনাশ। আমরা তো এসব কিছুই জানিনা। কোনও ব্যবস্থাই করিনি। আমরা তো ভেবেছিলাম, একটা গাড়ি ধরবো, চলে যাবো। কিন্তু আপনি যা শোনালেন স্যার, এরপরে তো, কিরে কী করবি?’
তন্ময় বললো, ‘কী আর করা যায়। প্রোগ্রাম ক্যানশেল।’
সবাই হতাশ হয়ে বিছানায় ধপধপ করে বসে পরলো।
প্রফেসর রায় ওদের সকলের মুখগুলো দেখে নিয়ে বললেন, ‘এতো আপসেট হবার কিছু নেই। উপায় আছে। যদি তোমরা রাজি থাকো।’
নীল ঘরের বন্ধ জানালাটা খুলে দিতে দিতে বললো, ‘আপনারা কাল ঐ দিকেই যাচ্ছেন তো?’
এইবারে প্রফেসর চেয়ারে বসলেন। এতক্ষণ দাঁড়িয়েই কথা বলছিলেন। বললেন, ‘আমি ব্যাপারটা কোলকাতা থেকেই সেরে এসেছি। ওখানে এজেন্ট আছে কিনা। আমার খুবই পরিচিত। আমি তিন জনের জন্য বুকিং করেছি। এখন তোমরা যদি বলো, তাহলে এখনই ওকে ফোন করে, চারটে সিট বাড়িয়ে নিতে পারি।’
তন্ময় অবিশ্বাসের সুরে বললো, ‘এখন কী আর হবে?’
প্রফেসর আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বললেন, ‘আরে বাবা সে দায়িত্ব আমার। আগে তোমরা বলো রাজি কিনা?’
নীল খোলা জানালা দিয়ে বাইরের দিকে চোখ রেখে বললো, ‘রাজি, আপনি ব্যবস্থা করুন স্যার। ওখানে যাবো বলেই এখানে আসা। কোনও কিন্তু নেই। আপনি ব্যবস্থা করুন স্যার, প্লিজ।’
প্রফেসর বিনয়ের সাথে বললেন, ‘না না, ওভাবে বলোনা প্লিজ। তোমাদের ভালো লেগেছে বলেই না, তাছাড়া মাঝরাস্তা থেকে একসঙ্গে এলাম, একই জায়গায় আছি, একসাথে সবাই বেড়াতে যাবো, এ তো মহা আনন্দের কথা, তাই না?’ প্রফেসর চেয়ার ছেড়ে উঠে দরজার দিকে যেতে যেতে বললেন, ‘ওকে, তাহলে এই কথাই রইলো। কাল ভোর পাঁচটায় ডেকে দেবো। ঠিক সাতটায় গাড়ি আসবে। গুডনাইট অল অফ ইউ।’
তন্ময়, দরজা বন্ধ করতে করতে বললো,
‘থ্যাংকস স্যার। গুডনাইট।’
দীপেন ঘরের আলো নিভিয়ে দিয়ে বললো,
এখন আর কোনও কথা নয়। প্রবলেম সলভড। কাল ভোর পাঁচটায় ওঠা। গুডনাইট।’
ব্রজেশ এতক্ষণ শ্রোতার ভুমিকায় ছিল। এখন শোবার সময় গায়ে কম্বল টেনে নিতে নিতে হালকা স্বরে উচ্চারণ করলো, ‘নীলচে সুখ।’
এই ছোট্ট একটি কথায় কেউ মুচকি হাসলো কিনা অন্ধকার ঘরে তা টের পাওয়া গেল না।
চলবে……………..
আরেকটু প্রকৃতিকে পেলে মন ভরতো